১. মাটি এবং পরিবেশ:
মাটি: আগর গাছ লোমযুক্ত বা দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মায়। তবে এটি হালকা অম্লীয় থেকে নিরপেক্ষ (pH ৫.৫ থেকে ৬.৫) মাটিতে চাষ করা যায়।
পরিবেশ: আগর গাছ উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। গাছটি বছরে প্রায় ১৫০০২০০০ মিমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়।
২. বীজ বা চারার প্রস্তুতি:
বীজ রোপণ: আগর গাছ সাধারণত বীজ থেকে উৎপন্ন করা হয়। বীজ সংগ্রহ করার পর, দ্রুত বীজ রোপণ করতে হবে, কারণ বীজের অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়।
চারা উৎপাদন: বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে বীজকে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর, রোদযুক্ত স্থানে ভালো মানের মাটিতে বীজ রোপণ করা যায়। চারাগাছ প্রায় ৬১২ মাসের মধ্যে রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়।
৩. রোপণ পদ্ধতি:
দূরত্ব: ৩ মিটার × ৩ মিটার বা ৪ মিটার × ৪ মিটার দূরত্বে গাছগুলো রোপণ করা হয়।
গর্ত খোঁড়া: রোপণের জন্য প্রায় ৫০ সেমি × ৫০ সেমি × ৫০ সেমি গর্ত খোঁড়া হয়।
সার প্রয়োগ: গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, কিছু রাসায়নিক সার (যেমন ইউরিয়া, টিএসপি) প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে নেওয়া উচিত।
৪. গাছের পরিচর্যা:
সেচ: চারা রোপণের পর প্রথম ২৩ মাস পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ যত্ন সহকারে সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমন: নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, যাতে আগর গাছের বৃদ্ধি সুষ্ঠুভাবে হয়।
গাছ ছাঁটাই: গাছের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে শাখাপ্রশাখা নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে।
৫. রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ:
আগর গাছ সাধারণত তেমন রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে কিছু ছত্রাকজনিত রোগ আক্রমণ করতে পারে। এজন্য সময়মতো ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. আগর উৎপাদন (আগরউড সংগ্রহ):
আগর গাছের কাঠ থেকে সুগন্ধি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় আগরউড সংগ্রহ করা হয়। আগর গাছে সংক্রমণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগরউড উৎপাদিত হয়। প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমণ হতে পারে, অথবা কৃত্রিমভাবে গাছের মধ্যে সংক্রমণ ঘটানো যায়।
আগর গাছের ফলন:
আগর গাছ সাধারণত ১০১৫ বছর পর সুগন্ধি কাঠ উৎপন্ন করে। এ সময় কাঠ সংগ্রহ করা হয় এবং কাঠের ভিতর থেকে আগরউড উত্তোলন করা হয়।
সঠিক পরিচর্যা ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে আগর গাছ থেকে ভালো মানের আগরউড উৎপাদন সম্ভব, যা বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।
No comments:
New comments are not allowed.