অর্জুন

অর্জুন_গাছ
অর্জুন
বৈজ্ঞানিক নামঃ Emblica officinalis Gaertn
পরিবারঃ Euphorbiaceae
ইংরেজি নামঃIndin Gooseberry
পরিচিতি
অর্জুন একটি পত্রঝরা বৃহত বৃক্ষএটিসাধারনত ১৫-২৫ মিটার লম্বা হয়গোড়ায়অধিমূল আছেবাকোল পুরুরং ধুসরঅথবা বেগুনি ধুসর এবং মসৃনঅর্জুন এরছাল সহজেই তোলা যায়ছাল পুরু - সে মি হয়অর্জুন কাঠ গাড় বাদামি এবং খুবশক্ত হয়পাতা চড়াগোড়ার দিকে  অগ্রভাগ সরু ,মসৃন এবং ক্ষুদ্র প্রশাখায় বীপ্রতীপভঙ্গীতে বিন্যস্ত   
ব্যবহার্য অংশ- গাছ বা মূলের (ত্বক) পাতা ফল।
অর্জুন গাছের ছাল সংগ্রহ করতে পূর্বের দিকের ছালটা নিতে হয়; কারণ পূর্বের দিকের বায়ুর তরলত্ব বেশী, ওদিকের ছালটা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকারিত্বেও অনুকূল। সকালের রৌদ্র সেদিককার ছালটায় রঞ্জনরশ্মি বেশী সমৃদ্ধ হয়


ঔষধি গুন      
ভেষজশাত্রে ঔষধি গাছ হিসাবে অর্জুনের ব্যাবহার অগনিত।বলাহয়ে থাকে, বাড়িতেএকটি অর্জুন গাছ থাকা আর এক জন ডাক্তার থাকা একই কথা।এর ঔষধি গুনমানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।শরীরের বল ফিরিয়ে আনাএবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত রাখতে অর্জুন ব্যাবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ওবেদ-সংহিতায়।তার পর যত দিন যাচ্ছে ততই অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাবিত হচ্ছে।

ü  যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রাক্তচাপ নাইতাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে১০-১২ গ্রামশুকনা হলে - গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ  ৫০০ মি লি জলএর সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫মিলি থাকতে ছেঁকে বিকেলবেলা খেলেবুক ধড়ফড়ানি কমে যায়।তবে পেটে যাতে বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতেহবে।

ü  অর্জুন ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয়হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা  বাড়ে।এটিরক্তের কোলেষ্টরল কমায় এবং ফলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।

ü  বিচুর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারসিরোসিসের টনিক হিসাবেব্যাবহৃত হয়।

ü  অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে টানিন মুখ,জিহ্বা  মাড়ীর প্রদাহের চিকিৎসায়ব্যাবহার হয়।এটি মাঢ়ীঢ় রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষতখোস পাঁচড়া দেখাদিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়।

ü  অর্জুনের ছাল হাঁপানিআমাশয়ঋতুস্রাবজনিত সমস্যাব্যথ্যা ,প্রদর ইত্যাদিচিকিৎসায়ও উপকারী।

ü  এটি সংকোচ  জ্বর নিবারক হিসাবেও কাজ করে।

ü   ছাড়া অর্জুনে saponin রয়েছেএকটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়।তাই চর্ম  যৌনরোগে অর্জুন ব্যাবহ্রত হয়।যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুনের ছালের রস ব্যাবহারহয়।

ü  অর্জুনের ছালে essential oil রয়েছে তাই অর্জুন খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায়।খাদ্যাতন্ত্রের ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

ü  ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধকারী gallic acid,ethy gallae  lutenolin রয়েছেঅর্জুন ছালে।এ কারনে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাহারের সুযোগ রয়েছে।


নিম্মে অর্জুনের কিছু উপকারী দিক বর্ণনা করা হলো-
হৃদরোগ:
অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে। অর্জুন ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এই কো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়। অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে। বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। বাকলে রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুঁড়া - গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে
লো- ব্লাড্প্রেসারে- উপরিউক্ত পদ্ধতিতে তৈরী করে খেলে প্রেসার স্বাভাবিক হয়
অ্যাজমা:
অর্জুন ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বা পায়েসের সাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যাজমা রোগের স্থায়ী সমাধান হবে
ক্ষয়কাশে:
অর্জুন ছালের গুঁড়া, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি মধু বা মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাশির উপকার হতো
হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে:
অর্জুন ছাল রসুন বেটে অল্প গরম করে মচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়। তবে সেই সাথে অর্জুন ছালের চূর্ণ - গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো হয়
ত্বকের পরিচর্যা:
ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেচতার দাগ দূর হয়
বুক ধড়ফড়:
যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে - গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ৫০০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকাল বেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো-ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে
রক্তপিত্তে:
মাঝে মাঝে কারণে বা অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে। সেক্ষেত্রে - গ্রাম ছাল রাত্রিতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার পাওয়া যায়
ফোঁড়া:
ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়
ক্ষত বা ঘা:
শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যায়
কানের ব্যথায়:
কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার করা হয়। কচি পাতার রস কানের ভিতরে দুই ফোঁটা করে দিলে কানের ব্যথা ভালো হয়
 শ্বেত বা রক্তপ্রদরে- উপরিউক্ত মাত্রা মত ছাল ভিজানো জল আধ চামচ আন্দাজ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপশম হয়
শুক্রমেহে(Spermatorrhoea)- অর্জুন ছালের গুড়ো / গ্রাম আধ পোয়া আন্দাজ গরম জলে / ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ছেঁকে জলে আন্দাজ চামচ শ্বেতচন্দন ঘষা মিশিয়ে খেলে উপকার হয়
যৌন রোগ:
যাদের মধ্যে যৌন অনীহা (Lack of Libido) দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল চূর্ণ উপকারী। এই ছাল চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এই রোগ দূর হয়। এছাড়া যাদের শুক্রমেহ(Spermatorrhoea) আছে তারা অর্জুন ছালের গুঁড়া - গ্রাম - ঘণ্টা আধা পোয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে, তারপর ছেঁকে ওই পানির সাথে চামচ শ্বেতচন্দন মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। এটা সুশ্রুত সংহিতার কথা
রক্ত আমাশয়ে:
- গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়
যাঁদের প্রস্রাবের সঙ্গে Puscell বা পুঁজ বেশী যায়, তাঁরা / গ্রাম শুকনো অর্জুন ছাল আধ পোয়া আন্দাজ গরম জলে / ঘন্টা ভিজিয়ে পরে ছেকে তার সঙ্গে একটু রান্না করা বার্লি মিশিয়ে খেলে ওটা চলে যাবে
হাঁপানীতে (Cardiac) অর্জুনের ফলের শুষ্ক টুকরো কলকে করে তামাকের মত ধোঁয়া টানলে হাঁপের টান কমে যায়
·         দন্তরোগে : দাঁত নড়া, দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, ঠা- বা গরম পানিতে দাঁত শিরশির করা, দাঁতের গোড়া ফুলে যাওয়া, মুখের দুর্গন্ধসহ যাবতীয় দন্তরোগের ক্ষেত্রে অর্জুন ফল, অর্জুন ছাল, নারিকেল গাছের নতুন শিকড় সবগুলো একত্রে মিশিয়ে পানিতে জ্বাল করে ক্বাথ তৈরি করে এতে সামান্য পরিমাণ কর্পূর মিশিয়ে প্রত্যহ দুবার ওই দ্রবণ মুখের ভেতর গড়গড়ালে দন্তরোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। ছাড়াও ২০০ গ্রাম অর্জুন ছাল চূর্ণ, ২০ গ্রাম লবঙ্গ, ২০ গ্রাম কাবাব চিনি, ৫০ গ্রাম নিমের ছাল, ৫০ গ্রাম নারিকেল গাছের শিকড়, গ্রাম কর্পূর, গ্রাম পিপারমেন্ট সবগুলো উপাদান একত্রে মিশায়ে পাউডার প্রস্তুত করে নিয়মিত সকাল রাতে দাঁত ব্রাশ করলে দন্তরোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হওয়া যায়।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়:
ডায়রিয়া বা পেটের অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে অর্জুনের ছাল ৪৫-৩০ গ্রাম করে খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অসুবিধা দূর হয়। মুখ, জিহ্বা মাড়ির প্রদাহে : অর্জুনের ছাল এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির রক্তপাতও বন্ধ করে। এছাড়াও অর্জুন ছাল সংকোচক জ্বর নিবারক হিসেবেও কাজ করে
এছাড়াও এর রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ। ইদানিং অর্জুন গাছের ছাল থেকে অর্জুন চাতৈরি হচ্ছে যা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। DOS থেরাপি অনুযায়ী অর্জুন ফল দেখতে মানব দেহের হৃদপিন্ডের মতো তাই অর্জুনকে হৃদরোগের মহৌষধ বলা হয়

1 comment: